IQNA

নওমুসলিমের কথা

মুসলিম বন্ধুর পারিবারিক সৌহার্দ দেখে ইসলাম গ্রহণ করি

19:29 - June 30, 2021
সংবাদ: 3470221
তেহরান (ইকন): হাইস্কুলে এক সহপাঠীর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ছেলেটি শান্ত-সভ্য। কথা বলে কম। নিজের মতো থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। একদিন বিরতির সময় আমি নিজেই তার সঙ্গে কথা বলি। সেদিন থেকে আমরা দুজন একসঙ্গে দুপুরের খাবার খেতাম।

শরতের একদিন সে আমাকে জানাল যে আজ সে আমার সঙ্গে দুপুরের খানা খাবে না। আমি যখন খানা খাব তখন সে আমার পাশে বসে থাকবে। বিষয়টি আমার কাছে খুব অদ্ভুত মনে হলেও আমি তাকে এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন করিনি। এভাবে বেশ কয়েক দিন চলল। একদিন তাকে প্রশ্ন করেই ফেললাম—কেন সে আমার সঙ্গে দুপুরে খাবার খায় না। আমি ভেবেছিলাম হয়তো সে অর্থসংকটে আছে। প্রশ্ন করেছিলাম যেন আমি তাঁকে সাহায্য করতে পারি। কিন্তু সে আমার সাহায্য প্রত্যাখ্যান করে বলল, আমি রোজাদার। ওই দিনই আমার বন্ধুটি আমাকে রাতের খাবারে তার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে।

আমার বন্ধুর নাম হাসান। হাসানের বাড়িতে প্রথম মেহমান হওয়ার দিনটি আমার কাছে স্মরণীয়। আমাকে হাসানের মা নিজের ছেলের মতো অভ্যর্থনা জানালেন। স্নেহ-মমতায় আমাকে বরণ করেছিলেন। সেদিন আমাদের সঙ্গে হাসানের দাদা-দাদিও উপস্থিত ছিলেন। আমার মনে আছে, আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, হাসানের দাদা-দাদি কী মাঝেমধ্যে এখানে বেড়াতে আসেন। হাসানের মা হেসে বলেন, আমরা সবাই একসঙ্গে থাকি। আমরা সবাই এক পরিবারের মানুষ। প্রথমে কথাটি শুনে আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। কেননা আমার দাদা-দাদি আমাদের সঙ্গে থাকেন না। তাদের আতিথেয়তায় আমি বেশ মুগ্ধ হয়েছি। আমাদের পরিবারে আমরা কখনো একসঙ্গে খবার খাই না। কারো ক্ষুধা লাগলে কিংবা খাবারের প্রয়োজন হলে ফ্রিজ থেকে নিয়ে খেয়ে ফেলে। আমাদের বাড়িতে কোনো মেহমান আসে না। আর যদি আমি আমার কোনো বন্ধুকে আমাদের বাড়িতে নিয়েও আসি, তবে আমার মাকে পাওয়া যায় না। তিনি তাঁর কাজে ব্যস্ত থাকেন।

হাসানের বাড়িতে এটিই আমার শেষ আমন্ত্রণ ছিল না। প্রতি সপ্তাহে সে আমাকে একদিন না একদিন ডিনারের দাওয়াত দিত। তাদের সঙ্গে কাটানো সময়গুলো আমার খুব ভালো লাগত। আমি প্রায় হাসানের বাড়ি যেতাম। তাদের সঙ্গে সময় কাটাতাম। আমি হাসানের পরিবার ও আমার পরিবারের মধ্যে পার্থক্য কী তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করতাম। হাসানের পরিবারে কী আছে, যা আমার পরিবারে নেই?

সে সময় ইসলাম নিয়ে আমার তেমন জানাশোনা ছিল না। হাসানের পরিবার যে মুসলিম তাও আমি জানতাম না। একদিন আমি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সময় হাসানের বাড়িতে অবস্থান করি। হঠাৎ দেখলাম, পরিবারে সবাই একসঙ্গে প্রার্থনা পড়ছে। এ দৃশ্যটি আমার ভেতরে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তারা শুধু একসঙ্গে খানা খায় না, তারা একসঙ্গে আল্লাহর মুখোমুখিও হয়। তারা একসঙ্গে আল্লাহর ইবাদতও করে। পরের দিন খাবারের বিরতির সময় হাসানের সঙ্গে আমার দেখা হলো। তাকে তাদের প্রার্থনা-ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। বললাম, তাদের মতো হলে আমাকে কী কী করতে হবে। সে আমার কথা শুনে খুব অবাক হলো।

স্কুল ছুটির পর আমি হাসানের বাড়ি যাই। তার বাবা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। তিনি এলে হাসান তাঁকে জানায়, আমি মুসলমান হতে চাই। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেন। জায়নামাজে বসে তিনি আমাকে কালিমা পাঠ করান। আল-হামদুলিল্লাহ! কালের কণ্ঠ

captcha