IQNA

যেভাবে গড়ে ওঠে তুরস্কের ভূগর্ভস্থ শহরগুলো

17:15 - March 25, 2021
সংবাদ: 2612514
তুরস্কের আনাতোলিয়া সভ্যতার আলো পাওয়া পৃথিবীর প্রাচীনতম অঞ্চলের একটি, যা রোমান ও উসমানীয় সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারও বহন করছে। সভ্যতা-সংস্কৃতির স্মৃতিবাহী আনাতোলিয়ায় রয়েছে বিস্ময়কর তিনটি ভূগর্ভস্থ শহর। 
হাজার বছরের প্রাচীন এসব শহর আধুনিক বিজ্ঞানের যুগেও বিস্ময়কর। শহরগুলো গড়ে ওঠার ইতিহাস তুলে ধরেছেন আবরার আবদুল্লাহ
 
ডিরিনকুয়ু
 
ডিরিনকুয়ু তুরস্কের প্রাচীন ও বহুতল ভূগর্ভস্থ শহর, যা তুরস্কের নেভেসির প্রদেশের ডিরিনকুয়ু জেলায় অবস্থিত। তুরস্কে অবস্থিত কয়েকটি ভূগর্ভস্থ শহরের মধ্যে এটাই সর্ববৃহৎ। মাটির তলের এ শহরে সর্বোচ্চ গভীরতা ২০০ ফিট এবং এতে ২০ হাজার মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যসহ আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া তাতে রয়েছে পানি সরবরাহ ও খাদ্য প্রস্তুত করার ব্যবস্থা, তেল ও মদের উৎপাদন কারখানা, আস্তাবল, গুদামঘর, আলো সরবরাহের ব্যবস্থা এবং রান্না ঘর। ডিরিনকুয়ুর দ্বিতীয় তলা একটি আলোকদীপ্ত প্রশস্ত ঘরে ধর্ম ও সাধারণ শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল।
 
ধারণা করা হয়, খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম থেকে সপ্তম শতাব্দীর মধ্যে ফ্রিজিয়ান সম্প্রদায়ের লোকেরা অত্র অঞ্চলের পাহাড়ে গুহা নির্মাণ শুরু করে। তবে তা শহরের রূপ পায় বাইজাইন্টাইন যুগে (৭৮০-১১৮০ খ্রিস্টাব্দ)। যখন আরব মুসলিমদের হাতে সাম্রাজ্যের বিপুল অংশ হাতছাড়া হয় এবং ইসলামী খেলাফতের সঙ্গে যুদ্ধ নিয়মিত হয়ে যায়। তখন অন্যান্য ভূগর্ভস্থ শহরের সঙ্গে দীর্ঘ টানেলের মাধ্যমে শহরটি সংযুক্ত ছিল। ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে মোঙ্গলীয় শাসক তৈমুরের আক্রমণ থেকে বাঁচতে এই শহরের বিপুলসংখ্যক মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। উসমানীয় খেলাফতের শাসনামলে শরণার্থীরা শহরটি ব্যবহার করত। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত গ্রিক কাপাডোসিয়ানদের নিয়ন্ত্রণে ছিল শহরটি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২৩ সালের দিকে ডিরিনকুয়ু শহর পরিত্যক্ত হয়। ১৯৬৩ সালে স্থানীয় এক অধিবাসী ভূগর্ভস্থ শহরটি আবিষ্কার করে এবং ১৯৬৯ সালে তা পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
 
উছিসার
 
উছিসারের গঠন ভূগর্ভস্থ শহরের মতো হলেও তুর্কিরা একে প্রাকৃতি রাজপ্রাসাদ হিসেবেই উল্লেখ করে। এটি তুরস্কের নেভেসির প্রদেশের কাপাডোসিয়ায় অবস্থিত। অত্র অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে বাইজাইন্টাইন শাসকরা প্রাসাদটি তৈরি করেন। প্রাসাদ-চূড়ার উচ্চতা ৬০ মিটার, যা থেকে দূরাঞ্চল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা যায়। বাইজাইন্টাইন আমলে প্রথমে এটি অভিজাতদের আবাসিক ভবন এবং পরবর্তী সময়ে আশ্রম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। উছিসারে এক হাজার মানুষের জীবনযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বর্তমানে ভূগর্ভস্থ কক্ষগুলোর বেশির ভাগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রাসাদের ঠিক মধ্যভাগে রয়েছে ভূগর্ভস্থ প্রদর্শনকেন্দ্র। যার আয়তন প্রায় ১০০ মিটার। সম্প্রতি উছিসারে গড়ে উঠেছে কবুতরের রাজ্য। ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে ভূগর্ভস্থ প্রাসাদটি আজিজ বিন আর্দাসিয়ারের মাধ্যমে মুসলিম নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর দীর্ঘকাল পর্যন্ত তা উসমানীয় খেলাফতের একটি সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
 
কায়মাকলি
 
তুরস্কের ঐতিহাসিক কাপাডোসিয়ার একটি ভূগর্ভস্থ শহর কায়মাকলি। নেভেসির থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৯৬৪ সালে প্রথম পর্যটকদের জন্য শহরটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। গঠনকাল ও গঠনগত বৈশিষ্ট্যের বিচারে এটি ডিরিনকুয়ু শহরের মতোই প্রাচীন ও স্থাপত্যশৈলীর অধিকারী। তবে পার্থক্য হলো এই শহরের সঙ্গে যুক্ত আছে ১০০ ট্যানেল। ট্যানেলের মাধ্যমে কায়মাকলি শহর ডিরিনকুয়ু শহরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। ভূগর্ভস্থ শহরের টানেলগুলো এখনো গুদাম, আস্তাবল ও ভূগর্ভস্থ ভাণ্ডার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নিচু, সংকীর্ণ ও গভীর তিন ধরনের টানেল রয়েছে। চারতলাবিশিষ্ট এই শহরের প্রত্যেক তলায় রয়েছে যাতায়াত, বাতাস সঞ্চালন ও নিরাপত্তাব্যবস্থা।
 
প্রথম তলায় প্রবেশ পথের মুখেই আস্তাবল। আস্তাবলের ডান পাশেই থাকার ঘর এবং তার একটু সামনে রয়েছে চার্চ। দ্বিতীয় তলায়ও আছে একটি গির্জা। গির্জার দেয়ালে ভূগর্ভস্থ শহরে সমাহিত ব্যক্তিদের নাম অঙ্কিত আছে। গির্জার সামনে আছে বসার জায়গা। গির্জা ছাড়াও দ্বিতীয় তলায় বসবাসের কিছু জায়গাও আছে। তৃতীয় তলায় গুদাম ঘর, তেল ও মদ উৎপাদন কারখানা ও রান্নাঘর। পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখার জন্য এ তলার পাথরগুলোতে তামা ব্যবহার করা হয়েছিল। চতুর্থ তলার পুরোটাতে আছে রক্ষণাগার ও তাতে ব্যবহৃত পাত্রগুলো। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শহরের একাংশই পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। ডেইলি সাবাহ ও উইকিপিডিয়া।
captcha