IQNA

চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম বিজ্ঞানী এবং মহান দার্শনিক ইবনে সিনা

23:30 - August 23, 2017
1
সংবাদ: 2603684
বিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞান। আর এই চিকিৎসা বিজ্ঞানে একজন বিজ্ঞানী বিশ্বজুড়ে সুনাম অর্জন করেছিলেন। তাঁর লেখা চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ “আল কানুন ফিল থিব” কে দীর্ঘকাল ইউরোপে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত করা হতো।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম বিজ্ঞানী এবং মহান দার্শনিক ইবনে সিনা
বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: মানবদেহের অঙ্গসংস্থান ও শরীরতত্ত্ব সম্বন্ধে তিনি যে সব তথ্য প্রদান করেছিলেন সেগুলো সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত পৃথিবীর সব দেশের চিকিৎসকেরা অনুসরণ করেছিলেন। বলা যায়, শল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাঁর কালজয়ী অবদান উল্লেখযোগ্য। এই খ্যাতিমান বিজ্ঞানী হচ্ছেন আবুল আলি ইবনে সিনা। তিনি ইবনে সিনা নামে অধিক পরিচিত।

অবাক করা ঘটনা, মাত্র দশ বছর বয়সেই ইবনে সিনা পবিত্র কোরআন শরীফ মুখস্থ করতে সক্ষম হন। ইবনে সিনা লাইব্রেরীতে পড়ার সুযোগ পেয়ে রীতিমত অধ্যয়ন শুরু করলেন এবং লাইব্রেরীর সব বই মুখস্থ করে ফেললেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, অর্থনীতি, রাজনীতি, গণিত, জ্যামিতি, ন্যায়শাস্ত্র, ধর্মতত্ত্ব, চিকিৎসা বিজ্ঞান, কাব্য ও সাহিত্য বিষয়ে অসামান্য পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। ২১ বছর বয়সে তিনি আল মুজমুয়া নামে একটি বিশ্ব কোষ রচনা করেন। এতে তিনি গণিত ছাড়া সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেন।

শৈশবে তিনজন গৃহ শিক্ষকের নিকট তিনি ধর্মতত্ত্ব, ফিকাহ্‌, তাফসীর, গণিত শাস্ত্র, দর্শন, ন্যায়শাস্ত্র এবং এমনকি জ্যামিতি বিষয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন। এভাবে তিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সে সেসময় প্রচলিত সকল জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছিলেন। বলা হয়ে থাকে ইবনে সিনা সাহিত্য, ধর্মতত্ত্ব, ইউক্লিডের জ্যামিতি, এরিস্টটলের দর্শন, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং বীজগণিতে বুৎপত্তি লাভ করেন। মূলত কিডোর ইচ্ছায় তাঁকে আইন শাস্ত্রে অধ্যয়ন শেষে আঠার বছর বয়সে গণিত ও চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। এতে তাঁর যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। এছাড়া দর্শন শাস্ত্রেও তিনি অধ্যয়ন করেন। তখনকার দিনে তিনি ‘হাকিম’ অর্থাৎ প্রজ্ঞাবান উপাধিতে ভূষিত হন।

ইবনে সিনা পদার্থ বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, জ্যামিতি, গণিত, চিকিৎসা বিজ্ঞান, সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে প্রায় শতাধিক কিতাব রচনা করেন। এগুলোর মধ্যে আল কানুন, আশ শেফা, আরযুযা ফিত তিব্ব, লিসানুল আরব, আলমজনু, আল মুবাদাউন মায়াদা, আল মুখতাসারুল আওসাত, আল আরসাদুল কলিয়া উল্লেখযোগ্য।

আল কানুন কিতাবটি তৎকালীন যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক বিপ্লব এনে দিয়েছিল। কারণ এত বিশাল গ্রন্থ সে যুগে অন্য কেউ রচনা করতে পারেননি। তার গ্রন্থ আল কানুন চিকিৎসা শাস্ত্রের মূল অপ্রতিদ্বন্দ্বী পাঠ্য পুস্তক হিসেবে গণ্য হত প্রায় পাঁচ শতক ধরে। আল কানুন কিতাবটি ল্যাটিন, ইংরেজি, হিব্রু প্রভৃতি ভাষায় অনুদিত হয় এবং তৎকালীন ইউরোপের চিকিৎসা বিদ্যালয় গুলোতে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আল কানুন ৫টি বিশাল খণ্ডে বিভক্ত যার পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪ লক্ষাধিক। কিতাবটিতে শতাধিক জটিল রোগের কারণ, লক্ষণ, পথ্যাদির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়। তিনি ফার্মাকোলজি ও ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিসের প্রভূত উন্নয়ন করেন। তবে তার মূল অবদান ছিল চিকিৎসা শাস্ত্রে। তিনি হলিস্টিক মেডিসিনের প্রণেতা। যেখানে একই সাথে শারীরিক, মানসিক এবং আত্মিক যোগসূত্রকে বিবেচনায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি মানুষের চোখের সঠিক এনাটমি বর্ণনা করেন। যক্ষ্মা রোগ নিয়ে তিনি অভিমত দেন যে যক্ষ্মা একটি ছোঁয়াচে রোগ। যা তার পরের পশ্চিমা চিকিৎসকবৃন্দ প্রত্যাখ্যান করেন এবং যা আরো পরে সঠিক বলে প্রমাণিত হয়। তিনিই প্রথম মেনিনজাইটিস রোগটি সনাক্ত করেন। প্রকৃত পক্ষে তিনিই আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রের জনক। আশ শেফা দর্শন শাস্ত্রের আরেকটি অমূল্য গ্রন্থ, যা ২০ খণ্ডে বিভক্ত ছিল। এতে ইবনে সিনা রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রাণীতত্ত্ব ও উদ্ভিদতত্ত্ব সহ যাবতীয় বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। তিনি মানুষের কল্যাণ ও জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতি সাধনে আজীবন পরিশ্রম করেছেন এবং ভ্রমণ করেছেন জ্ঞানের সন্ধানে। পানি ও ভূমির মাধ্যমে যে সকল রোগ ছড়ায় তা তিনিই আবিষ্কার করেছিলেন। সময় ও গতির সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্কের কথা তিনিই আবিষ্কার করেন। তিনি অ্যারিস্টটলের দর্শন ভালভাবে অধ্যয়ন করেন। কিন্তু অ্যারিস্টটলের কিছু কিছু মতবাদের সাথে তিনি একমত হলেও সকল মতবাদের সাথে তিনি একমত হতে পারেননি। শাবিস্তান


প্রকাশিত: 1
পর্যালোচনা করা হচ্ছে: 0
প্রকাশযোগ্য নয়: 0
a k m kayes siddik
0
0
very good
captcha