বার্তা সংস্থা ইকনা: মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস একাডেমীর পক্ষ থেকে বিশ্বের সেরা অভিনয় শিল্পীদের মাঝে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানটি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান যা প্রতি বছর বিশ্বের ১০০টি দেশে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
অস্কার পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠান ২৭ই ফেব্রুয়ারি সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশ অতিথিবৃন্দ ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইসলামভীতি নীতি এবং আমেরিকায় সাত দেশের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
ট্রাম্পের ইসলামভীতি নীতির প্রতিবাদ শুরু হয় ইরানের প্রখ্যাত পরিচালক আসগার ফরহাদির বিরোধিতার মাধ্যমে। ২০১৬ সালে "সামিনের সাথে নাদেরের বিচ্ছেদ" চলচ্চিত্রের জন্য তিনি অস্কার পুরস্কার অর্জন করেন। এই বছরেও অস্কার পুরস্কারের জন্য "ফুরুশানদে' (the salesman) সিনেমাটি নির্বাচিত হয়েছে।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত এবং বর্ণবাদী বক্তব্যের কারণে আসগার ফরহাদি এবং কাদের এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি। এই দুই পরিচালক নিজেদের প্রতিনিধি হিসেবে আনুশা আনসারী এবং ফিরুয নাদেরীকে প্রেরণ করেছেন।
ইরানের প্রথম মহাকাশচারী, বিশ্বের প্রথম মুসলিম নারী মহাকাশচারী, প্রথম নারী মহাকাশ পর্যটক, তিন জনের পর মহাকাশযাত্রার খরচ পরিশোধকারী আনুশা আনসারী এবং নাসার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ফিরুজ নাদেরী এই অনুষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন।
আসগার ফরহাদির বিজ্ঞার চয়নের কারণ হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্ণবাদী পদক্ষেপের প্রতিবাদ করা।
বিদেশী ভাষায় সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে 'দ্যা সেলসম্যান’ -এর নাম ঘোষণার পর আনুশা আনসারী মঞ্চে উঠে এই চলচ্চিত্রের পরিচালক আসগার ফারহাদীর বার্তা পাঠ করেন। বার্তা বলা হয়েছে, "এটি অনেক সম্মানের বিষয় যে, দ্বিতীয়বারের মত এই মূল্যবান পুরস্কার পেয়েছি। একাডেমীর সদস্য, ইরানে আমার গ্রুপ, প্রযোজক আলেকজান্ডার মালেহক্বী এবং কোহেন মিডিয়া ও আমাজন ব্রডকাস্টকে ধন্যবাদ জানায়। এছাড়াও নির্বাচিত বিদেশী ছবির প্রার্থীদেরকেও ধন্যবাদ জানায়।
আজ রাতে আপনাদের পাশে উপস্থিত না থাকার জন্য আমি দুঃখিত। আমাদের দেশের জনগণ এবং অন্য ছয় দেশের জনগণ যারা অমানবিক আইনের সম্মুখীন হয়েছেন অর্থাৎ অভিবাসীদের আমেরিকায় প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত করার কারণে আমি আমেরিকায় প্রবেশ করিনি।
বিশ্বকে ‘আমরা’ এবং ‘আমাদের শত্রুরা’ হিসেবে বিভক্ত করায় আতঙ্ক, আগ্রাসনকে ন্যায়সঙ্গত প্রমাণের চাতুরি এবং যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।"
আসগর ফরহাদি ছাড়াও সেলসম্যান-এর নায়িকা তারানেহ আলীদোস্তিও ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে অস্কার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি।
ইরানের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক আসগর ফরহাদি পরিচালিত ‘দ্যা সেলসম্যান’ সিনেমাটি এবারের অস্কার অনুষ্ঠানে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে সেরা পুরস্কার জিতেছে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার অস্কার জিতলেন ফরহাদি। ২০১২ সালে ‘দ্যা সেপারেশন’ ছবির জন্য একই বিভাগে অস্কার পেয়েছিলেন ইরানের এ খ্যাতিমান পরিচালক।
এদিকে, অস্কার অনুষ্ঠানের আগে গতরাতে লন্ডনের বিখ্যাত ট্রাফাগলার চত্বরে 'দ্যা সেলসম্যান' সিনেমাটি দেখানো হয়। লন্ডনের মেয়র সাদিক খানের অনুরোধে এটি দেখানো হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে নিষ্ঠুর এবং লজ্জাকর হিসেবে অভিহিত করেন সাদিক খান।
অস্কার পাওয়ার আগেও দু’টি খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে সেলসম্যান। ২০১৬ সালে ৬৯তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে ফরহাদি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের এবং দ্যা সেলসম্যানের অভিনেতা শাহাব হোসেইনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেন। এছাড়া, মিউনিখ চলচ্চিত্র উৎসব ও আমস্টারডাম চলচ্চিত্র উৎসবেও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেছে ফরহাদির ‘দ্যা সেলসম্যান।’
অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের পরিচালক জিমি কিমেল অনুষ্ঠানের শুরুতেই ট্রাম্প নীতির বিরোধিতার প্রতি ইঙ্গিত দেন। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন অংশে ট্রাম্পে উদ্দেশ্য করে হাস্যরসিকতা এবং টিটকারি করার চেষ্টা করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটার পেট ওপেন করে জিমি কিমেল বলেন বিস্ময়কর ব্যাপার তিনি এখনও টুইটারে প্রকাশ করেননি। তার জন্য আমি চিন্তায় রয়েছি।
এছাড়াও তিনি টুইটারে লিখেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প, অনলাইন?!
এই অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে নিয়ে ভালোই হাসি মশকারা করা হয়েছে।
কিছু স্টারগণ নীল ফিতা নিয়ে অস্কার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। আমেরিকার অভিবাসীদের স্বাধীনতা এবং তাদের অধিকারের প্রতি সমর্থন প্রদর্শনের জন্য এই নীল ফিতা ব্যবহার করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে লাল গালিচা থেকেই এই প্রতিবাদ স্পষ্ট হয়েছে।
iqna